সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত/আধা-স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, স্ব-শাসিত ও সংবিধিবদ্ধ কর্তৃপক্ষের এবং বিভিন্ন কর্পোরেশনের চাকুরিতে/কর্মে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে সরকারের বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি সংশোধন।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, সমতার নীতি এবং অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, সংবিধিবদ্ধ কর্তৃপক্ষ, এবং বিভিন্ন কর্পোরেশনের চাকরিতে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটা নিম্নরূপ নির্ধারণ করা হয়েছে:
- মেধাভিত্তিক ৯৩%
- মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনার সন্তানদের জন্য ৫%
- ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জন্য ১%
- শারীরিক প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গের জন্য ১%
প্রজ্ঞাপনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, নির্ধারিত কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে শূন্য পদ সাধারণ মেধা তালিকা থেকে পূরণ করা হবে।
এর আগে জারি করা সকল প্রজ্ঞাপন, পরিপত্র, আদেশ, নির্দেশ, এবং অনুশাসন রহিত করা হয়েছে এবং এই আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে বলে জানানো হয়েছে প্রজ্ঞাপনে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক মঙ্গলবার বিকালে গুলশানে এক ব্রিফিংয়ে কোটা নিয়ে প্রজ্ঞাপন জারির কথা জানান। জনপ্রশাসন মন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, শিক্ষামন্ত্রী মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল এবং তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাতও উপস্থিত ছিলেন সংবাদ সম্মেলনে।
আইনমন্ত্রী প্রজ্ঞাপন জারির পটভূমি, কোটা সংস্কার আন্দোলন, এবং সরকারের অবস্থান তুলে ধরে বলেন, “আমরা আমাদের কথা রেখেছি, এই প্রজ্ঞাপন জারি হয়েছে।”
এর আগে আন্দোলনের মুখে ২০১৮ সালে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে কোটা তুলে দিয়ে একটি পরিপত্র জারি করেছিল সরকার। তবে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির (১৩তম থেকে ২০তম গ্রেড) চাকরিতে ৫৬ শতাংশ পদে কোটার ভিত্তিতে নিয়োগের সুযোগ ছিল।
কিন্তু এক রিট মামলার প্রেক্ষিতে হাই কোর্ট গত জুন মাসে ২০১৮ সালের পরিপত্র বাতিল করে কোটা ফিরিয়ে আনার রায় দেয়। এর প্রতিবাদে শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা আন্দোলনে নামলে দেশজুড়ে সহিংসতা ও হতাহতের ঘটনা ঘটে; ঢাকার কয়েক স্থানে নজিরবিহীন নৈরাজ্যের মধ্যে কারফিউ জারি করা হয়।
পরে রাষ্ট্রপক্ষ এবং দুই শিক্ষার্থীর করা আপিল শুনানি করে রোববার হাই কোর্টের রায় বাতিল করে কোটার নতুন বিন্যাস ঠিক করে দেয় সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
রায়ে বলা হয়, “এই নির্দেশনা ও আদেশ প্রদান সত্ত্বেও সরকার প্রয়োজন ও সার্বিক বিবেচনায় এই আদালত কর্তৃক নির্ধারিত কোটা বাতিল, সংশোধন বা সংস্কার করতে পারবে।”
এর দুদিন পর সরকার আদালতের রায় মেনে কোটার নতুন বিন্যাস প্রকাশ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে।
২০১৮ সাল পর্যন্ত ৫৬ শতাংশ পদে কোটার ভিত্তিতে নিয়োগের সুযোগ ছিল। এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও নাতি-নাতনিদের জন্য ৩০ শতাংশ, নারীদের জন্য ১০ শতাংশ, জেলাভিত্তিক ১০ শতাংশ, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর জন্য ৫ শতাংশ, এবং প্রতিবন্ধী প্রার্থীদের জন্য ১ শতাংশ কোটা সংরক্ষণ করা ছিল।
ওই বছর ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোটা সংস্কারের দাবিতে বড় ধরনের বিক্ষোভ হয়। আন্দোলনকারীরা কোটা ব্যবস্থার সংস্কার করে ৫৬ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার দাবি জানায় এবং মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাদ দেওয়ারও দাবি জানায়।
শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সব কোটা বাতিলের অনুশাসন দেন।
পরে ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর নবম গ্রেড (আগের প্রথম শ্রেণি) এবং দশম থেকে ১৩তম গ্রেডের (আগের দ্বিতীয় শ্রেণি) পদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি বাতিল করে একটি পরিপত্র জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
তবে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির পদে তখনো ৫৬ শতাংশ কোটা বহাল থাকে। এবার এ দুই শ্রেণিতেও ৭ শতাংশ কোটা নির্ধারণ করা হলো।

0 মন্তব্যসমূহ